জামাইষষ্ঠী
ল ক্ষ ণ সাঁ ত রা
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। বাঙালির বিভিন্ন পাল-পার্বণের মধ্যে জামাইষষ্ঠীর একটি বিশেষ স্থান আছে। বাংলা ছাড়া আর কথাও জামাই আপ্যায়নের এহেন নজির নেই। জামাইষষ্ঠীকে ঘিরে রসনায় যত রস সঞ্চার ঘটে অন্য কোনও পাল-পার্বণে তা ঘটে না। তবে পবিত্রতার দিক থেকে ভাইফোঁটা, জামাইষষ্ঠীকে পিছনে ফেলে দেয়। আসলে ‘জামাই’ শব্দটি সামাজিকভাবে কিঞ্চিৎ অভাগা। জামাই যদি ঘরজামাই-এ পরিণত হয় তবে তার কপালে জোটে আরও অনেক সামাজিক লাঞ্ছনা! ভোলা মহেশ্বরের মতো জামাইও অবহেলিত হয়েছেন। তবু মহিলারা আজও শিবের মতো স্বামীই কামনা করেন। এখন সৌন্দর্যের জয় সর্বত্র। তাই আজকালকার প্রত্যেক শাশুড়িই চান তাঁর জামাই রতনটি যেন হিরের টুকরো ছেলে হয়; যেন রাজপুত্রের মতো চেহারা হয়। আয় যেন হয় মোটা অঙ্কের। অর্থাৎ অন্তরে সৌন্দর্য থাকুক বা না থাকুক বাহ্যিক সৌন্দর্য ও অর্থে বলীয়ান হলেই জামাই রতনটি শাশুড়ির চোখে হিরের টুকরো।
বর্তমান সমাজে স্টেটাস বাড়ানোর জন্য তাই লম্বা দৌড়! পাত্র-পাত্রী বিজ্ঞাপনের পাতা লক্ষ্য করলেই দেখা যায় সুদর্শন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অফিসার কাম্য। জামাইষষ্টী দিনটির জন্য সারা বছর ধরে শাশুড়ি মাতা-রা যেমন অপেখায় থাকেন, তেমনই জামাইরাও থাকেন আশায় আশায়। এই বিশেষ অনুষ্টানের দিন জামাই, শাশুড়ি ও শ্যালিকাদের মধ্যে একটা সোহাগের বাতাবরণ গড়ে ওঠে। আমার ছেলে অমুক অফিসের বস বলার চেয়ে আমার জামাই আমেরিকায় থাকে বলার মধ্যে অদ্ভুত তৃপ্তি ছড়িয়ে পড়ে শাশুড়ির চেহারায়। কথাটা পরিচিত মহলে বলতেও বুক গর্বে ভরে ওঠে। আর এখন বিয়ের পর ছেলেদের কাছে মায়ের থেকে শাশুড়িই বেশি আপন হয়ে পড়েছে। যত দিন যাছে, জামাই ও জামাইষষ্ঠী তার আসল ঐতিহ্য থেকে ক্রমশ সরে যাচ্ছে। এখন ক’জন জামাই সময়মতো শাশুড়ির ষষ্ঠীব্রত পালনের জন্য হাজির হন এবং ক’জন শাশুড়িই বা জামাইয়ের মুখে চিড়ে, মুড়কি, দই-সন্দেশ, আম, কলা, লিচুর ফলার তুলে দিয়ে অন্নগ্রহণ করেন? আসলে এখন জামাইষষ্ঠী রেসেপি-নির্ভর। জামাইকে কে কত ভাল আইটেম খাওয়াতে পারল তার প্রতিযোগিতা চলে। তাই জামাইষষ্ঠীর সময় বাজার হয়ে ওঠে অগ্নিগর্ভ।
সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য এই প্রতিযোগিতা বন্ধ হওয়া দরকার।
No comments:
Post a Comment